নদী আছে পানি নেই জেলে আছে মাছ নেই

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ২৫ জুন, ২০১৩, ০২:১৮:০২ দুপুর



‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ আমাদের এই শ্বাশত পরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে দিনদিন। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে নদীমার্তৃক বাংলাদেশের শুধু নদ নদীই হারিয়ে যাচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদী শুকিয়ে যাবার পাশাপাশি মাছ শুন্য হয়ে পড়েছে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে বড় বড় নদীতেও। উত্তরাঞ্চলের ছোটবড় ৬০টি নদী একদিকে যেমন নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় ,তেমনি সেসব নদীতে আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জেলে সম্প্রদায়ের যেমর চরম দুর্দিন চলছে, তেমনি আমিষের অভাবও প্রকট আকার ধারন করছে।

পদ্মা,যমুনা,তিস্তা,ব্রম্মপুত্রসহ কোন নদীতেই এখন স্বাভাবিক পানি নেই। নদীতে মাছের মহা আকাল দেখা দিয়েছে। জেলেরা মাছ ধরার আশায় নদীতে জাল ফেলে কোনো মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে তীরে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে জীবন ও জীবিকার তাগিদে এবং মহাজনদের দাদনের টাকা পরিশোধ করার চিন্তায় জেলে পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত উৎকন্ঠার মধ্যে দিন যাপনের পাশাপাশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

বগুড়ার যমুনা,করতোয়া,রংপুর,কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধার তিস্তা,যমুনা,ব্রম্মপুত্র,ঘাঘট, সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী তীরবর্তী জেলেরা হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে নৌকা ও জালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মাছ ধরার জন্য নদীতে চলে যান। এক বুক আশা নিয়ে চলতি ভরা মৌসুমে মাছ ধরে অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাদের।

বিশেষ করে এপ্রিল-মে এই ২ মাসে জাটকাসহ, ছোট মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাল ও নৌকা মেরামতের জন্য প্রচুর টাকা ঋণ.গ্রহণ করেন জেলেরা। মাছ ধরে তা-পরিশোধ করার কথা থাকলেও মাছ না পাওয়ায় উল্টো দায়-দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেনার টাকা পরিশোধ করতে না পারা ও বেকার হয়ে পড়ায় অধিকাংশ জেলে পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অন্য পেশা খুজতে শহরে আসছেন।

মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহই যাদের একমাত্র পেশা তারা নদীতে মাছ না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ছেন। ক্রমাগত লোকসান এবং দাদনের টাকার চিন্তায় জেলেরা সবদিক থেকেই সর্বস্বার্ন্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে নদীর কূলে সারি সারি নৌকা আর জেলেদের অপো করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সিরাজগঞ্জের মেঘাই, ঢেকুরিয়া, শুভগাছা, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, খাসরাজবাড়ী, শালগ্রাম, রঘুনাথপুর, মাজনাবাড়ী, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর চর এলাকারসহ বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে দেশী মাছসহ ইলিশের কোনো দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ আগে এসময় এসব স্থানে মাছে ভরপুর থাকতো। স্বচ্ছলতা আসতো প্রতিটি জেলে পরিবারে।

সিরাজগঞ্জের নাটুয়ারপাড়ার বিজয় হাওয়ালদার জানান, যমুনা নদীতে ইলিশ মাছ নেই বললেই চলে। যমুনা নদীতে জাল ফেলে কোনো মাছ না পেয়ে জেলেরা হতাশ হয়ে ফিরে আসছেন।

মৎস্য ব্যবসায়ী কাশেম বেপারী জানান, এক সময়ে এই এলাকায় ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ প্রচুর পাওয়া গেলেও ্এখন আর কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে অল্প কিছু মাছ বিক্রির জন্য আনা হলে তার দাম আকাশ ছোঁয়া। দেশী মাছের পাশাপাশি ইলিশ মাছও তেমন পাওয়া যায় না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চরম লোকসান হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করছেন,একেতো নদীতে মাছের আকাল তার ওপর আবার কারেন্ট জালের ব্যাপক ব্যবহার ও জাটকা নিধন মাছ শুন্য করে ফেলছে এসব নদীকে। শুধু পানি অভাবেই মাছ হারিয়ে যাচ্ছে না ,প্রশাসনের যথাযথ তদারকি না থাকার কারণেও উত্তরাঞ্চলের মৎস্য সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বগুড়া জেলা মৎস্য অফিসার ক্ষিরোদ কুমার পাল জানান,প্রতিবছরই প্রাকৃতিক মৎস্য ভান্ডার সংকুচিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মৎস সম্পদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমাদের মৎস সম্পদের সবচেয়ে বড় উৎস নদী । সেইসব নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়া এবং মা মাছসহ পোনামাছ নিধনের কারনে মাছের আকাল দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া কৃষিতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের কারনেও দেশী মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার সচেতনতা যেমন জরুরী তেমনি দেশের নদনদী গুলোকে মাছের নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র তৈরী করা উচিৎ। তা না হলে মাছের আকাল আরো বাড়তেই থাকবে।

বিষয়: Contest_mother

২৫১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File